সমার্থক শব্দ - বিস্তারিত

সমার্থক বলতে বুঝায় সমান অর্থ যে শব্দ অন্য কোনো শব্দের একই অর্থ কিংবা প্রায় সমান অর্থ প্রকাশ করে, তাকে সমার্থক শব্দ বলা হয় সমার্থক শব্দের একটিকে অন্যটির প্রতিশব্দ বলা হয় ইংরেজিতে যাকে বলা হয় Synonym. উদাহরন হিসাবে ধরা যাক:
আকাশ -- আসমান, গগন, নভোমন্ডল
নারী -- রমণী, রামা, বামা, ললনা

** সমার্থক শব্দের প্রয়োজনীয়তা:
শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমার্থক শব্দের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম  যেমন -
. সমার্থক শব্দের প্রতি সম্যক ধারণা আমাদের রচনাশৈলীকে সুন্দর, সমৃদ্ধ প্রাঞ্জল রূপে উপস্থাপন করতে সহায়তা করে
. বক্তব্য বিবৃতি প্রদান এবং আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রে সমার্থক শব্দ ভাষাকে সুষমা দান করে
. শব্দ ব্যবহারে পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হলে সমার্থক শব্দ জানা প্রয়োজন
. সমাজজীবনে ব্যক্তির স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে সমার্থক শব্দের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে
. কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমার্থক শব্দ বাক্যে ব্যবহার না হলে বাক্যে শব্দের প্রয়োগজনিত সমস্যা সৃষ্টি হয়

মোট কথা, সমার্থক শব্দ বা প্রতি শব্দের জ্ঞান মানব মনের ভাব অভিপ্রায়কে পরিপূর্ণ রূপে প্রকাশ করতে সহায়তা করে কাজেই ভাব-ভাষা-মূল্যবোধের উৎকর্ষের জন্য সমার্থক শব্দের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য

সমার্থক বা প্রতিশব্দ বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাংলা ভাষা-সাহিত্যের বিকাশ, সৌন্দর্য রূপায়ন তথা বাক্যের পরিবর্তন পরিবর্ধনের ক্ষেত্রে প্রতিশব্দ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সাহিত্যের সৃজনশীলতা মননশীলতায় সমার্থবোধক শব্দের ব্যবহার অত্যাবশ্যক পৃথিবীতে যে ভাষার প্রতিশব্দ যত বেশি, সে ভাষা তত বেশি সমৃদ্ধ

বাংলা ব্যাকরণবিদগণের পরিভাষায় সমার্থবোধক শব্দকে দুভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় যথা:

শাব্দিক: সমার্থক বা প্রতিশব্দের অর্থ হলো অনুরূপ বা সম অর্থবোধক শব্দ বাংলা ভাষায় এমন সম অর্থের বহুল ব্যবহৃত শব্দকে সমার্থক বা প্রতিশব্দ বলা হয়ে থাকে

পারিভাষিক: বাংলা ব্যাকরণবিদগণের পরিভাষায় সমার্থবোধক বা প্রতিশব্দের অর্থ হলো সময়ের সংগত বহু অর্থ দানকারী শব্দসমূহ স্থান-কাল-পাত্রভেদে শব্দের মৌলিক অর্থ ঠিক রেখে বিভিন্নরূপে ব্যবহৃত হয় এমন শব্দসমূহকে সমার্থক বা প্রতিশব্দ বলা হয় যেমন- আধিক্য অর্থে কয়েকটি শব্দ- খুব, বেশি, প্রচুর, প্রচন্ড, ভীষণ ইত্যাদি যদি বলা হয়আজ প্রচুর বৃষ্টি হয়েছেতাহলে বাক্য সঠিক হবে না এখানে বলতে হবেআজ খুব বৃষ্টি হয়েছে

আবার যদি বলা হয়তোমাকে আমার বিরাট ভালো লাগেতাহলে বাক্য সঠিক হবে না কারণ ভালোবাসার তো কোনো আকার পরিসর নেই তাই এখানে বলতে হবেতোমাকে আমার ভীষণ ভালো লাগে

** সমার্থক বা প্রতিশব্দের গুরুত্ব প্রয়োজনীয়তা
প্রতিশব্দের ব্যবহার ছাড়া মনের ভাব যথাযথভাবে প্রকাশ করা যায় না তাই মনের ভাব প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সমার্থক বা প্রতিশব্দের ব্যবহারের গুরুত্ব প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম নিন্মে সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ ব্যবহারের সুবিধাসমূহ আলোচনা করা হলো যা থেকে সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দের গুরুত্ব প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা যায়-

. প্রতিশব্দ বা সমার্থক শব্দ শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ করে
. সমার্থক শব্দের ভান্ডার সমৃদ্ধ হলে, সেগুলোর বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রয়োগে সাহিত্য স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হয়
. গাম্ভীর্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদান-যথাযথ প্রতিশব্দ বা সমার্থক শব্দ ছাড়া সম্ভব নয়
. গুরুচন্ডালি দোষমুক্তির প্রয়োজনে সমার্থক শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ হওয়া প্রয়োজন
. সমার্থক শব্দ মনের ভাব প্রকাশের কাজকে সহজ করে দেয়
. সমার্থক শব্দ বাক্য বিন্যাসের ক্ষেত্রে মাধুর্য আনয়ন করে
. সমার্থক শব্দ ভাষাশৈলীর অবয়বকে শক্তিশালী করে
. সমার্থক শব্দ সৃজনশীল সাহিত্য সৃষ্টি করে
. সমার্থক শব্দ কবিতার উপমা, শব্দ চয়ন ভাষার আতিশয্যে গাম্ভীর্যের বিকাশ ঘটায়
১০. সমার্থক বা প্রতিশব্দ ভাষার সৌন্দর্য নান্দনিকতার প্রাণ
১১. সমার্থক শব্দ মননশীল সাহিত্য সৃষ্টি আধুনিক ধারা বিকাশে সহায়ক